কথায় বলে, সাত রাজার ধন নাগমণি অর্থাৎ সাত জন রাজার ধন সম্পত্তি একত্রিত করলে নাগ মণির মূল্যের হবে। নাগমণির উল্লেখ পুরান এমনকি সিনেমাতেও পেয়েছি সেই থেকে আমাদের ধারণা যে নাগমণি থাকলেও থাকতে পারে! সেই নিয়ে দু চার কথা খোলসা করে বলার চেষ্টা করছি।
প্রথমেই বলে রাখি নাগমণি মানুষের কল্পনা মাত্র অনেকটা স্পাইডার ম্যান বা এন্ডগেমের থানোস-এর ইনফিনিটি স্টোনের মতো যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।
1. বলা হয় যে সাপ 100 থেকে 1000 বছর বাঁচবে সেই সাপ সাপেরদের রাজা হয়ে যাবে এবং মণি তার মাথায় ধারণ করবে :-
>কিন্তু কথা হলো সাপ ওতো দিন বাঁচে না। আলাদা আলাদা সাপের আয়ুষ্কাল আলাদা আলাদা! যেমন হেলে সাপ প্রায় 5 থেকে 6 বছর বাঁচে । দাঁড়াস, কেউটে, গোখরো বাঁচে প্রায় 11 থেকে 12 বছর। ভারতীয় অজগর বাঁচে 34 থেকে 35 বছর। তাই কোনো সাপই 100 বছর বা তার বেশি বাঁচে না তাই মণির ধারণা সম্পূর্ণ ভারতীয় কুসংস্কার!
2 .যে সাপ কোনো দিন কামড়ায় নি সেই সাপের বিষ জমে শক্ত হয়ে পাথর হয়েযায় আর বিষের জন্য ঝলমল করে:-
>বিষধর সাপ তার শিকার করতে তার বিষের প্রয়োগ করে। শিকার ছাড়া না খেয়ে সাপ বাঁচবে কি করে?
3. সাপ বুড়ো হয়ে গেলে নাগমনির আলোর সাহায্যে শিকার করে:-
>কিছু সাপ দিনে চলা ফেরা করে ও কিছু সাপ রাত্রে চলা ফেরা করে! যারা রাত্রে চলাফেরা করে সেই সাপেদের চোখ অনেকটা বিড়ালের চোখের মতো হয় যাতে অল্প আলোতেও দেখতে পায়। তাছাড়া সাপ যেহুতু চোখে ভালো দেখতে পায় না তাই জিভ ও রিসেপ্টর বা সংবেদনশীল অঙ্গ এর উপর ভরসা করে (কিভাবে জিভ ও সংবেদনশীল অঙ্গ দিয়ে সাপ বুঝতে পারে তা পরে আলোচনা করবো) তাই নাগমনির আলোর কোনো দরকার নেই সাপের।
4 . সে সাপের নাগমনি আছে তারা ইচ্ছাধারী হয়, মানে যা ইচ্ছে হতে পারবে:-
>এগুলো হিন্দি সিনেমা থেকে আমাদের মাথায় ঢুকেছে বাস্তবে কখনো হয় না। লেখক গুল্প রোমাঞ্চিত করার জন্য এরকম প্লট সৃষ্টি করেন। সেটা নিয়ে মজা না পেয়ে, মাথায় ঢুকিয়ে নিজের মস্তিষ্কে কুসংস্কারের সংক্রমণ ঘটানো বোকামি। বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই!
5. সাপুড়েরা চোখের সামনে সাপের মাথার থেকে মণি বের করে দেয়!আর তুমি বলছো কুসংস্কার?:-
>সাপুড়েরা সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে বোকা বানিয়ে টাকা লুট করে চম্পট দেয়! সাপের মাথার থেকে মণি বের করা টাও একটা ভেলকি সেটা হলো - একটা ফনাধর সাপ নিয়ে বিশেষ করে গোখরো! (আমরা ফনাধর সাপ দেখলে রোমাঞ্চিত হই কিনা! স্বয়ং শিব সেও গলায় রাখে এই সাপ কে!) যাক সে নিয়ে অন্যদিন বলা যাবে । আসল কথাতে ফিরে আসি! তো এই গোখরো সাপ নিয়ে সাপটির লেজের উপরে ছোট্ট ফুটো করে সেখান থেকে কালো ,লাল চকচকে পাথর বা কাঁচের স্ফটিক ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে তো লেজে রাখলে হবে না আমাদের বিশ্বাস সেটা সাপের মাথায় থাকে! তাই সাপুড়েরা সেটাকে টিউবের মতো চেপে চেপে ঠেলতে ঠেলতে মাথায় নিয়ে আসে। (অনেকটা দাদুর আন্ডার প্যান্টের মতো যেভাবে সেফটি পিন দিয়ে দড়ি ঢোকানো হয় তেমনি)
এবার সাপুড়েরা অপেক্ষায় থাকে কাকে বোকা বানানো যায়! আপনার বাড়িতে সাপ টা ছেড়ে দিয়ে বলবে আমি একটা সাপের গন্ধ পাচ্ছি! মনে হয় খুব পুরনো সাপ মণি থাকতে পারে! ব্যাস আপনিও বললেন খুঁজুন খুঁজুন! সাপুড়েদের ওস্তাদ আপনাকে সাপের ভয়ংকর কথা বলে ব্যস্ত রাখছে অন্যদিকে তার চ্যালারা একটু মাটি নিয়ে এসে বললো ওস্তাদ দেখুন তো (সাপেদের গায়ে সব সময় গন্ধ থাকে না মেটিং সিজিনে ফেরোমনের কটু গন্ধ থাকে কিন্তু সেটা মাটি শুকে বলা যায় না! মাটি শুকে যদি বলে দিতেই পারতেন ওনারা তাহলে ওনাদের দিয়ে ল্যান্ড মাইন খোজানো হয় না কেন!) ওস্তাদ গন্ধ নিয়ে বিজ্ঞের মতো বললো এটা এটা গোখরো ,ফনিমনসা বা শীষ নাগ (যেটা আগে থেকেই ছেড়ে রেখে ছিল) ব্যাস সাপ টা ধরে আনা হলো । এই বার সে সাপেরমাথায় হাত দিয়ে বলবে এই অংশটা ফুলে আছে দেখুন মণি আছে! কেটে বের করে দিতে পারি 10000 বা 50000 টাকা লাগবে! (মুরগির বাড়ির সাইজের উপর ডিপেন্ড করে কতো টাকা চাইবে) আপনিও শুনেছেন সাত রাজার ধন সম্পতি একত্রিত করলে এই মণি সমান হয় আপনি কোটিপতি হয়ে যাবেন। ব্যাস সাপের মাথা কেটে একটা পাথর বের করা হলো (যেটা আগে থেকেই সাপুরেরা ঢুকিয়ে রেখেছিল) আপনিও আনন্দে গদগদ হয়ে টাকা দিয়ে কিনে নিলেন। আপনাকে বলা হলো এখন সদ্য বের করা হয়েছে তো তাই আলো বের হচ্ছে না পুজো দেবেন আস্তে আস্তে আলো হবে আর আপনার ধন সম্পত্তিও বাড়বে। এই বলে সাপুড়েও চম্পট দিলো !আর ,পরে আলোও বের হবে না আর আপনার সম্পত্তিও বাড়বে না এই মণি থেকে। আপনি আস্ত মুরগি বনে গেলেন!
একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো যদি মণি বলে কোনো জিনিস থাকতো বা মণির এমন ক্ষমতা থাকতো তাহলে সাপুড়েরা আপনাকে বিক্রি করবে কেন? ওরা নিজেরাইতো ধন সম্পত্তির মালিক হয়ে যেত তাই না?
তারচেয়ে একটু জানার চেষ্টা করুন। কুসংস্কার গুলো মাথা থেকে টেনে ছুড়ে ফেলুন! চোখের সামনের সাপুড়েদের এই অমানবিক কার্যকলাপ দেখলে তাতে বাধাদিন। পুলিশে খবর দিন। সাপ পোষা, সাপ নিয়ে খেলা দেখানো, ধরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই প্রাণী গুলিকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব।
সুতরাং সাপুড়ের কাছে নিজে মুরগি হওয়ার চেয়ে মুরগি কিনে খাওয়া ভালো!